নোয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নোয়াখালী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু বলেছেন, নোয়াখালীর আঞ্চলিক গানের জনক অধ্যাপক মোহাম্মদ হাশেম ছিলেন গণমানুষের শিল্পী। তিনি আঞ্চলিক গানের মাধ্যমে নোয়াখালী অঞ্চলকে জাতীয় পর্যায় থেকে দেশের বাহিরেও তুলে ধরেছেন। তাঁর গাওয়া গানের মাধ্যমে নোয়াখালীর, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ফুঠে ওঠেছে। তাই তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আমরা কৃপণতা করিনি।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বিকালে অধ্যাপক মোহাম্মদ হাশেমের ৭৬তম জন্মবার্ষিক উপলক্ষে জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চে দুইদিন ব্যাপি হাশেম উৎসব উদ্বোধনকালে আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু এসব কথা বলেন।
হাশেম উৎসব উদ্বোধনের পরপরই বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চ ঘিরে বসছে আড্ডা ও গানের আসর। এতে উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ হাশেম ফাউন্ডেশনের সভাপতি এডভোকেট কাজী মানছুরুল হক খসরু ও সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মুস্তফা মনওয়ার সুজন।
পরে শহরের প্রধান সড়কে একটি শোভাযাত্রা বের করে জেলা কোর্ট মসজিদ প্রাঙ্গণে অধ্যাপক মোহাম্মদ হাশেমের সমাধিস্থলে পুষ্পমাল্য অর্পন করা হয়।
ধ্যাপক মোহাম্মদ হাশেম চার দশক নোয়াখালীর আঞ্চলিক গান নিয়ে গবেষণা করেছেন। লিখেছেন দেড় হাজারের বেশি গান। নিজেই গেয়েছেন বেতার-টেলিভিশনে।
নোয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষাকে সংগীতে রূপান্তর করে পেয়েছেন ব্যাপক পরিচিতি। শুধু নোয়াখালীর আঞ্চলিক গানই নয়, তিনি লিখেছেন পাঁচ শতাধিক পল্লিগীতিও।
শিল্পী অধ্যাপক মোহাম্মদ হাশেম ১৯৪৭ সালের ১০ জানুয়ারি নোয়াখালী সদর থানার চরমটুয়া ইউনিয়নের শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নিজ গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিয়াজ মোহাম্মদ হাইস্কুলে মাধ্যমিক পাস করে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সনদ পান। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই তিনি গানের জগতে পরিচিত হতে থাকেন। সংগীতেও তার উচ্চতর ডিগ্রি রয়েছে। লোকসংগীত-স¤্রাট শিল্পী আবদুল আলীম তার সংগীত গুরু। ঢাকা মিউজিক কলেজে সংগীতে ডিগ্রি নেয়ার পর তিনি সেখানেই বাংলা বিভাগ ও সংগীতের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
নোয়াখালীর প্রধান সংগীতখ্যাত ‘আঙ্গো বাড়ি নোয়াখালী রয়্যাল ডিস্ট্রিক ভাই/হেনী মাইজদী চৌমুহনীর নাম কে হুনে নাই’-গানটি তাকে এনে দিয়েছিল খ্যাতি। এ গান আজও মানুষের মুখে মুখে।
তার জনপ্রিয় অন্যান্য গানের মধ্যে রয়েছে ‘আল্লায় দিসে বাইল্লার বাসা নোয়াখাইল্লা মাডি’, ‘নোয়াখালীর দক্ষিণে দি উইটসে নোয়া চর’, ‘রিকশাঅলা কুসকাই চালা ইস্টিশন যাইয়াম’, ‘আহারে ও কুলসুম কতুন আইলো ডুবাইআলা কইল্লো এ জুলুম’।
২০২০ সালের ২৩ মার্চ বার্ধক্যজনিত রোগে ঢাকার একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয় মোহাম্মদ হাশেমের।